মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:১৪ অপরাহ্ন

‘বিচারপতিরা শপথের মধ্যে থেকে প্রতিনিয়ত রাজনীতি করেন’

‘বিচারপতিরা শপথের মধ্যে থেকে প্রতিনিয়ত রাজনীতি করেন’

স্বদেশ ডেস্ক:

‘বিচারপতিরা প্রতিনিয়ত রাজনীতি করেন। শপথের মধ্যে থেকে রাজনীতি করেন, শপথের বাইরে গিয়ে নয়। রাজনীতি করতে রাজনৈতিক দল করা লাগে না’- সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলা হয়েছে।

রোববার (২০ আগস্ট) সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সমিতির সভাপতি মো: মোমতাজউদ্দিন ফকির ও সাধারণ সম্পাদক মো: আবদুন নূর দুলাল।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, আপনারা অবগত আছেন যে, অতি সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের দু’জন মাননীয় বিচারপতি- বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: আবু জাফর সিদ্দিকী সম্পর্কে কটূক্তি করেন এবং তাদের পদত্যাগ দাবি করে সারা দেশে বিশৃংখলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

‘শপথবন্ধ রাজনীতিবিদ’- এই কথাটার তারা ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। শপথবন্ধ রাজনীতিবিদ অর্থ দলীয় রাজনীতিবিদ নয়। আমাদের প্রিয় সংবিধান একটি রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক দলিল। দেশের সর্বোচ্চ আইন। সম্মানিত বিচারপতিরা সেই সংবিধানের রক্ষক। সেই সংবিধান চর্চা করেন। গণতন্ত্রের ওপর ভার্ডিক্ট দেন। আইনের শাসনের ওপর ভার্ডিক্ট দেন। সামরিক জান্তার কর্মকাণ্ডের ওপর ভার্ডিক্ট দেন।

দলীয় রাজনীতি করা আর দলের বাইরে থেকে রাজনীতি করা এক কথা নয়। মাননীয় বিচারপতি জনাব এম. ইনায়েতুর রহিম এই প্রসঙ্গের অবতারণা করে কোনো প্রকার ভুল করেননি বরং দেশ এবং জাতির প্রতি তার বুদ্ধিমত্তা, দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ এবং মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন।

দেশে দেশে কত নির্বাচন হয়, সেসব নিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর কোনো খবর নেই বা মাথাব্যাথাও নেই। সব মাথাব্যথা কেবল বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে। তাদের মাথাব্যথা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়েছে, ইউএন চার্টার অনুযায়ী প্রত্যেকটি দেশ সার্বভৌম। ধনী রাষ্ট্র যেমন সার্বভৌম দরিদ্র রাষ্ট্রও একই মর্যাদার সার্বভৌম। বড় রাষ্ট্র যেমন সার্বভৌম, ছোট রাষ্ট্রও তেমনি সার্বভৌম।

সার্বভৌমত্বের দুটি তাৎপর্য- (ক) প্রথম তাৎপর্য হচ্ছে অধিকার। আমি সার্বভৌম। সুতরাং আমার আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না। (খ) দ্বিতীয় তাৎপর্য হচ্ছে কর্তব্য। অন্য রাষ্ট্র সার্বভৌম। সুতরাং তার ভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আমি হস্তক্ষেপ করব না।

কোনো কোনো দেশ বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার চর্চার নামে দ্বিতীয় তাৎপর্যটি অর্থাৎ তাদের কর্তব্যটি মেনে চলছেন না। তারা কূটনৈতিক শিষ্টাচার এবং অন্য রাষ্ট্রের অধিকারের সীমা লংঘন করছেন, যা তারা কিছুতেই করতে পারে না। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ।

সে কথাটি মনে করে দিয়েছেন আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি জনাব মো: আবু জাফর সিদ্দিকী। একজন বিচারপতি যেমন বিচারকার্য পরিচালনা করেন, তেমন তিনি এই মাটি ও মানুষের সন্তান। এই বাংলাদেশ থাকলে সবকিছু থাকবে। বাংলাদেশ না থাকলে কিছুই থাকবে না।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বিচারপতিগণ সম্পর্কে কটূক্তি করে জাতীয় আইনজীবী ফোরাম এবং তাদের নেতৃত্ব গর্হিত কাজ করেছেন এবং সুস্পষ্টভাবে আদালত অবমাননা করেছেন। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি তাদের এই জাতীয় বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

কিছু কিছু রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য সুযোগসন্ধানী বহির্বিশ্বকে সুযোগ এবং ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিচ্ছে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মনে করে এসব অপতৎপরতা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।

উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট শোক দিবসের আলোচনায় সভায় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বিচারকদের ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী বিদেশি শক্তির মাথা ঘামানো নিয়ে বক্তব্য দেন। এরপর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সংবাদ সম্মেলন করে দুই বিচারপতির শপথ ভঙ্গ হয়েছে উল্লেখ করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877